শীতকালিন ফুলের মধ্যে ডালিয়া অন্যতম। অসম্ভব সুন্দর এই ডালিয়া ফুলের পাপড়ির দৃষ্টিনন্দন বিন্যাস ও বর্ণ বৈচিত্র্যের জন্য এটি সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ডালিয়া ফুল বিভিন্ন আকারের ও লাল, সাদা, কমলা, বেগুনি, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের হয় শুধু নীল আর সবুজ রঙ ছাড়া। এই ফুলের উল্লেখযোগ্য কিছু জাত হচ্ছে সিংগেল ডালিয়া, কলারেট ডালিয়া, স্টার ডালিয়া, ডেকোরেটিভ ডালিয়া, অ্যানেমনি ডালিয়া, স্টারলেট কুইন, হোয়াইট ষ্টার, ক্যাকটাস ডালিয়া, ইত্যাদি।
ডালিয়ার চাষ পদ্ধতি (Cultivation Method) -
জলবায়ু:
ডালিয়ার জন্য উপযোগী তাপমাত্রা ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উজ্জ্বল সূর্যালোক ও হালকা বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। ছায়ায় ডালিয়ার গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুল কম ও ছোট হয় এবং রঙের উজ্জ্বলতা কম হয়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, গরম, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা তিকর।
মাটি/জমি নির্বাচন:
সুনিস্কাশিত উর্বর দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির সামান্য (পিএইচ ৭-৭.৫) মাটি ডালিয়ার জন্য উপযোগী।
চারা উৎপাদন বা বংশবিস্তার:
বীজ, মূলজ কন্দ, শাখাকলম এবং ত্রে বিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে ডালিয়া বংশ বিস্তার করে। বীজের চারায় মাতৃগাছের গুণাগুণ সমুন্নত থাকে না, অনেক সময় ডবল শ্রেণির বীজে জন্মানো গাছে সিঙ্গল শ্রেণির ফুল ফোটে ও ফুলের বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই বীজের চারার ব্যবহার অত্যন্ত কম। প্রয়োজনে আশ্বিন-কার্তিক মাসে স্বাভাবিক নিয়মে চারা উৎপাদন পূর্বক ২৫-৩০ দিন বয়সে জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে।
মূলজ কন্দ ও ডাল কলম থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো :
শাখা কলম:
আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ডালিয়ার শাখা কলম করা যায়। এ সময়ে মূলজ কন্দে জন্মানো কচি চারা বা শাখা থেকে গিঁটসহ কেটে বা ভেংগে নিতে হয়। তাছাড়া পুষ্ট কন্দ বা কাণ্ডের পাশে জন্মানো ১৫-২০ সি.মি. লম্বা পুষ্ট শাখাও গিটসহ সংগ্রহ করা চলে। পরে শাখাগুলোকে বালি ভর্তি টবে কিংবা জমিতে পুঁতে প্রয়োজনমত হালকা সেচ দিলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে শাখায় শিকড় গজায়। শিকড় গজানোর পর কলমগুলোকে সাবধানে তুলে পলিথিন ব্যাগে বা ছোট টবে ৫০% গোবর মিশ্রিত মাটিতে লাগাতে হয়। ৮-১০ দিনের মধ্যে চারা সতেজ হয়ে উঠলে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ:
পরিবেশে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত সময়ে জমিতে বা টবে ডালিয়ার চারা রোপণ করা যায়। ডালিয়ার মাটি গভীরভাবে নরম ও ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জমিতে ২০০ কেজি গোবর/কম্পোষ্ট, ৩ কেজি কাঠের ছাই (দেড় কেজি এম পি) ও ২ কেজি হাড়ের গুঁড়ো (দু’কেজি টি এস পি) সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। টবে চাষের জন্য ২ ভাগ দো-আঁশ মাটি, ২ ভাগ বালি, ২ ভাগ কাঠের ছাই, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১ ভাগ গোবর/কম্পোষ্ট, ১ ভাগ খৈল ও ১ ভাগ হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে সার মাটি তৈরি করতে হয়।
চারা রোপণ ও পরিচর্যা:
জমিতে জাত ভেদে ৬০-৯০ সে.মি. দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে আর প্রতি টবে একটি করে চারা লাগাতে হয়। টবের আকার ২৫ সে.মি. হলে ভালো হয়। চারা লাগানোর পর থেকে গাছে এমন ভাবে সেচ দিতে হয় যাতে কখনো পানির ঘাটতি না পড়ে ও জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়।
আরও পড়ুন - Rubber Plant Farming – বাড়ির বাগানে রাবার গাছের চাষ কীভাবে করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি
প্রতিবার সার প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হয়। তাছাড়া গাছের পাতায় মাঝে মাঝে পানি সিঞ্চন করা ভালো। ফুল কুঁড়ি জন্মানোর পর কম পরিমাণে ও ঘন ঘন সেচ দিলে ফুল বড় হয়।
ফুল সংগ্রহ: জমিতে বা বড় টবে গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ফোটে। ফুল সম্পূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হবার কিছু আগে সন্ধ্যার দিকে ধারালো ছুরি দিয়ে ডাঁটি সমেত ফুল কেটে সংগ্রহ করা উত্তম। এতে ফুল অধিক সময় থাকে। অতঃপর ফুলে পানি ছিটিয়ে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠানো উচিত।
আরও পড়ুন - Kharif Crop Farming - বারি পেঁয়াজের বীজ থেকে চারা উৎপাদন ও চাষের পদ্ধতি
Share your comments